ঢাকা মেডিকেল কলেজ

বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত চিকিৎসা বিষয়ক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল

(ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ঢাকা মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ। এটি ১৯৪৬ সালের ১০ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়[৩] যা বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে হতে স্নাতক পর্যায়ে পাঁচ বছর মেয়াদি এমবিবিএস ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ লোগো
ধরনমেডিকেল কলেজ
স্থাপিত১৯৪৬ (1946)
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস্
অধ্যক্ষমোঃ শফিকুল আলম চৌধুরী[১]
পরিচালক (হাসপাতাল)ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক[২]
স্নাতক১,০০৮ (২০২০)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
স্নাতকোত্তর৮৭৭ (২০২০)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ঠিকানা
সেক্রেটারিয়েট রোড
, ,
শিক্ষাঙ্গনশহুরে, ২৫ একর (০.১০১ বর্গকিলোমিটার)
সংক্ষিপ্ত নামঢামেক বা ডিএমসি
ওয়েবসাইটwww.dmc.gov.bd www.dmc.edu.bd
মানচিত্র
ঢাকা মেডিকেল কলেজের পশ্চিম দিকের প্রবেশপথ

ইতিহাসসম্পাদনা

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ সালে ভারতবর্ষের ক্ষমতা দখলের প্রায় একশ বছর পর ১৮৫৩ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠারও একশ’ বছরে এ অঞ্চলে কোন মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়নি। মধ্যবর্তী এ দীর্ঘ সময়ে কিছু মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মিটফোর্ড হাসপাতালের সাথে প্রতিষ্ঠিত হয় মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল (যা বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ), ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহীসিলেট মেডিকেল স্কুল।

তবে পূর্ববঙ্গে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে নিতে চলে আসে ১৯৩৯ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার বছরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারের কাছে ঢাকায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করে। কিন্তু যুদ্ধের ডামাডোলে হারিয়ে যাওয়া প্রস্তাবটি ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষে আলোর মুখ দেখে। ব্রিটিশ সরকার উপমহাদেশের ঢাকা, করাচীমাদ্রাজে (বর্তমানে চেন্নাই) তিনটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ উপলক্ষে ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডাঃ মেজর ডব্লিউ জে ভারজিন এবং অত্র অঞ্চলের প্রথিতযশা নাগরিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করেই ১০ জুলাই ১৯৪৬ তারিখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ চালু হয়।[৪]

ব্যাচের নামকরণে K এর ব্যবহারসম্পাদনা

১৯৪৬ সালে সকল বর্ষেই শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে ১ম বর্ষ ব্যতীত অন্য সকল বর্ষে ছাত্ররা আসে মূলতঃ কলকাতা মেডিকেল কলেজ হতে মাইগ্রেশন করে। ১ম বর্ষের নামকরণ করা হয় কে-৫, একই ভাবে ২য় বর্ষের কে-৪, ৩য় বর্ষকে কে-৩, ৪র্থ বর্ষকে কে-২ এবং ৫ম বর্ষকে কে-১ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রতিটি ব্যাচের নামেই সংযুক্ত রয়েছে K। এই K এর উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। কারও কারও মতে K এর উৎপত্তি কলকাতা থেকে। তবে ২০০১ এর আগ পর্যন্ত কলকাতাকে ইংরেজিতে Calcutta লেখা হত।[৫][৬] আবার কারও মতে ভারতীয় উপমহাদেশের একাদশ মেডিকেল কলেজ হিসেবে ইংরেজি বর্ণমালার একাদশ বর্ণ K নির্বাচন করা হয়েছে।[৭]

প্রারম্ভিক পরিস্থিতিসম্পাদনা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ গঠনের প্রাক্কালে স্থাপিত কমিটির প্রধান ডব্লিউ জে ভারজিন এর উপরেই ন্যস্ত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালনার গুরুদায়িত্ব। শুরুতে এনাটমিফিজিওলজি ডিপার্টমেন্ট না থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলে ক্লাস করতে হত। একমাস পর এনাটমি বিভাগের অধ্যাপক পশুপতি বসু এবং ফিজিওলজি বিভাগে অধ্যাপক হীরালাল সাহা শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর হাসপাতালে ২২ নং ওয়ার্ডে ক্লাস শুরু হয়। তখন ছিল না কোন লেকচার গ্যালারি বা ডিসেকশান হল। ১৯৫৫ সালে কলেজ ভবন স্থাপনের পর সেই অভাব পূরণ হয়।

এছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষাদানের পথিকৃতেরা ছিলেন ফরেনসিক মেডিসিনের ডাঃ এম হোসেন, ফার্মাকোলজি বিভাগে প্রফেসর আলতাফ আহমেদ, প্যাথলজি বিভাগে প্রফেসর আনোয়ার আলী এবং ডাঃ কাজী আবদুল খালেক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় প্রফেসর হাবিব উদ্দিন আহমেদ ও প্রফেসর হুমায়রা সাঈদ, মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক নওয়াব আলী ও প্রফেসর মোঃ ইব্রাহীম, সার্জারি বিভাগে প্রফেসর মেজর এফ ডব্লিউ এলিসন, প্রফেসর ই ভন নোভাক, লেঃ কর্নেল গিয়াস উদ্দিন এবং প্রফেসর আমির উদ্দিন প্রমুখ।[৮]

বর্তমান পরিস্থিতিসম্পাদনা

একটি মাত্র ভবন নিয়ে পথচলা শুরু করা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিজস্ব প্রায় ২৫ একর জমিতে বর্তমানে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা- কলেজ ভবন, অডিটোরিয়াম, পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র, ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল, বার্ন ইউনিট ইত্যাদি। শুরুতে হাসপাতাল ভবনেই প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস হলেও ১৯৫৫ সালে একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য বর্তমান কলেজ ভবনটি নির্মিত হয়। এতে বেসিক সাবজেক্টগুলির জন্য স্থান বরাদ্দের পাশাপাশি আরও কিছু স্থাপনা রয়েছে। ২৮টি বিভিন্ন বিভাগ এবং হাসপাতালে ৪২টি ওয়ার্ডে ২৩৪ জন ডাক্তার, ২০০ জন ইন্টার্নি ডাক্তার, ৫৬০ জন নার্স এবং ১১০০ জন অন্যান্য কর্মচারী নিয়োজিত আছেন রোগীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে। প্রায় ২৩০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০০ জনকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এ হাসপাতালকে ৫০০০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । [৯][১০]

প্রথম থেকে একই কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকলেও ১৯৭৫ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে কলেজ ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ পৃথকীকরণ করা হয়। কলেজের দায়িত্বভার অর্পিত হয় অধ্যক্ষের উপর এবং হাসপাতাল পরিচালনার ভার পরিচালকের উপর। তবে উভয় কর্তৃপক্ষই বিভিন্ন কার্যক্রমে একে অপরকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করে শিক্ষাদান ও চিকিৎসা সেবাদানের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে থাকে।

পাঠক্রমসম্পাদনা

কলেজে আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট এমবিবিএস ও পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট পাঠক্রম উভয়েই চালু আছে। বর্তমানে আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট কার্যক্রম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত। সাধারণ ও কোটা মিলিয়ে এমবিবিএস কোর্সে ২০২১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২৩০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভর্তি হয়। ২০২০ সাল থেকে ১২৮ জন বিদেশী ছাত্রছাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত আছে। ২০১২ সালের পরিবর্তিত পাঠক্রম অনুযায়ী চারটি পেশাগত পরীক্ষার বাধা পেরিয়ে একজন শিক্ষার্থী এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন লাভ করতে একবছর মেয়াদী ইন্টার্নশিপ এর প্রয়োজন হয়।

বর্তমানে ৪২টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স (এমডি, এমএস, এম ফিল, ডিপ্লোমা) চালু আছে। এছাড়া বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এন্ড সার্জনস এর বিভিন্ন বিষয়ের ফেলোশিপ কোর্স এ কলেজে চালু আছে।

জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকাসম্পাদনা

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনসম্পাদনা

শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের ম্যুরাল ও স্মৃতি-ফলক

১৯৪৮ এর মার্চ মাসে রমনার রেসকোর্সে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ যেদিন ঘোষণা দেন, ‘উর্দু, শুধু উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ সেদিন বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজই ক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল, প্রতিবাদে হয়েছিল সরব। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে মুখর প্রতিবাদী যুবকদের প্রতিহত করতে শাসকেরা বেছে নিয়েছিল নির্যাতনের কৌশল। লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ তো ছিলই, ছিল বিপ্লবী ছাত্রদের গ্রেফতার। অনেকের সাথে সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র এম আই চৌধুরী, আবু সিদ্দিক, আলী আসগর, জসিমুল হক ও ফরিদুল হক কারাবরণ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

এরপরে ১৯৫২ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল (যা ব্যারাক নামে পরিচিত ছিল) ভাষা আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র রূপে আবির্ভূত হয়। এখন যেখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সেখানেই ছিল ব্যারাক। টিনশেড প্রায় ২০টি ব্যারাক ছিল, যেখানে মেডিকেলের ছাত্ররা থাকত। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সংসদ ভবন (বর্তমান জগন্নাথ হল) এর নিকটবর্তী হওয়ায় কৌশলগত কারণেই সকল ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মেডিকেল হোস্টেল গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই ঢাকা শহরের সকল ছাত্ররা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের সামনে সমবেত হতে শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের সংসদ ভবন অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করার- কারণ তখন সংসদ অধিবেশন চলছিল। সশস্ত্র পুলিশি প্রহরা এবং ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকায় কোন মিছিল আয়োজন সম্ভব ছিল না। কিনতু অকুতোভয় ছাত্ররা বিকাল ৪টার দিকে ঐতিহাসিক আমতলা (যা বর্তমান জরুরি বিভাগের পাশে অবস্থিত ছিল) থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়।[১১] মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারশফিউর

একুশে ফেব্রুয়ারি সূর্যাস্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নেয় শহীদদের রক্তরঞ্জিত স্থানে একটি মিনার স্থাপন করার। ১২ নং ব্যরাকের ৬নং রুম ও হোস্টেলের পূর্ব পাশের গেটের মধ্যবর্তী এক জায়গায় মিনারটি ২২শে ফ্রেব্রুয়ারি ও ২৩শে ফেব্রুয়ারি রাতভর কাজ করে গড়ে তোলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। আর এ জন্য হাসপাতালের নির্মাণ কাজের জন্য সংরক্ষিত ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়।

প্রথম গড়া শহীদ মিনারটির বেদী ছিল ছয় বর্গফুট এবং উচ্চতায় দেড় ফুট। বেদী থেকে একটি কলাম গোড়া থেকে শীর্ষ পর্যন্ত সরু হয়ে উঠে গিয়েছিল। যা গোড়ায় ছিল চার বর্গফুট এবং শীর্ষে দুই বর্গফুট। পুরো মিনারটির উচ্চতা ছিল ১৪-১৫ ফুট। তৎকালীন ছাত্রনেতারা ঢামেকসুর ভিপি গোলাম মওলা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাশেম, পূর্বতন সাধারণ সম্পাদক শরফউদ্দিন আহমেদ, মুহাম্মদ জাহেদ, আব্দুল আলীম চৌধুরী, আহমদ রফিক প্রমুখ এ নির্মাণ কাজে নেতৃত্ব দেন। সাঈদ হায়দারের নকশা ও বদরুল আলমের লেখা অনুসরণে এই শহীদ মিনার গড়ে তোলা হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারটির প্রথমে উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউরের পিতা এবং পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দিন। কিনতু ২৬শে ফেব্রুয়ারি বিকেলে পাকবাহিনী এই শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয়।[১২]

ষাটের দশকের বিভিন্ন আন্দোলনসম্পাদনা

ষাটের দশকে ছাত্র ও জাতীয় রাজনীতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। আইয়ুব খানের সামরিক সরকার ছাত্র-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর নিপীড়ন শুরু করলে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতৃবৃন্দের মধ্যে সর্বজনাব সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, কে এম ওবায়দুর রহমান, মোঃ ফরহাদ(প্রয়াত), কাজী জাফর আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, নুরুজ্জামান, শেখ মনি (প্রয়াত), সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক(প্রয়াত)প্রমুখ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বকশীবাজারে ছাত্রদের হোস্টেলে থাকতেন। আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচী বা রূপরেখা নির্ধারণের বেশির ভাগ সভাই সে সময় কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হত। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাস শুধুমাত্র তৎকালীন ছাত্রনেতাদের নিরাপদ আশ্রয়স'ল বা সভার স্থানই ছিল না, এই কলেজের অনেক ছাত্র জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। আইয়ুব খান জেল, হুলিয়া ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে কিছুকাল আন্দোলন দমন করে রাখলেও ’৬৮ সালের শেষের দিকে ছাত্রনেতৃবৃন্দ পুনরায় আন্দোলন গড়ে তুলতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হলে ছাত্রদের সঙ্গে গোপনে আলোচনা শুরু করেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ’৬৯ এর ২০ জানুয়ারি ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিল শুরু হলে পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান জরুরি বিভাগের নিকট মিছিলে প্রথমে লাঠিচার্জ ও পরে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান গুরুতর আহত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কিন্তু চিকিৎসা শুরুর পূর্বে তিনি বর্তমান ৮ নং ওয়ার্ডে মারা যান। মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা শহীদ আসাদুজ্জামানের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে প্রথম শোক মিছিল বের করে। এই দশকে বিভিন্ন আন্দোলনকে দমন করার জন্য সরকার প্রায়ই ঢাকা শহরে কারফিউ দিতো। ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙ্গে মিছিল বের করলে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ এমনকি গুলিবর্ষণ পর্যন্ত করত। তখনকার ছাত্র-চিকিৎসকরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সেই কারফিউর মধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসত। এই দুঃসাহসিক কাজ করতে গিয়ে অনেকে নির্যাতন পর্যন্ত ভোগ করেছে। ’৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় ছাত্রদের স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের কয়েকদিন পরেই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা বর্তমান ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়ার চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।[১৩]

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসম্পাদনা

১৯৭১এর মুক্তিযুদ্ধে এই কলেজ থেকে পাশ করা চিকিৎসক, তৎকালীন ছাত্র, কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এদের অনেকেই অস্ত্রহাতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আবার কেউ কেউ হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা এবং অসহায় বাঙালিদের চিকিৎসা করেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা তিনভাগে বর্ণনা করা যেতে পারে- এক ভাগে যারা ঐ সময়ে কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের তৎপরতা, আরেকভাগে এই কলেজ থেকে পাশকৃত চিকিৎসকদের একটি অংশ যাঁরা অন্যান্য হাসপাতাল ও সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে কর্মরত ছিলেন কিনতু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করেছেন এবং শেষভাগে যারা অস্ত্রহাতে যুদ্ধ না করলেও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালিদের চিকিৎসা করেছেন।[১৪]

এই কলেজের তৎকালীন ছাত্রদের মধ্যে বিভিন্ন সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিম আহমেদ, আলী হাফিজ সেলিম, আবু ইউসুফ মিয়া, ইকবাল আহমেদ ফারুক, মুজিবুল হক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোজাফ্‌ফর, আমজাদ হোসেন, ওয়ালী, ওসমান, গোলাম কবীর, জিল্লুর রহিম, ডালু, নুরুজ্জামান, শাহাদত প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এদের অনেকেই ঢাকা শহর কমান্ডের তত্ত্বাবধানে থেকে যুদ্ধে করেছেন।[১৫] এই কলেজের কয়েকজন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা শহরের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ বর্তমান শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসে রাজাকারদের উপর হামলা চালায়। ছাত্রাবাসের ১০৭ নং রুমে সে সময় রাজাকারদের ঘাঁটি ছিল। তাদের গোপন হামলায় হোস্টেল গেটে পাহারারত ২ জন রাজাকার নিহত হয়। গুলির শব্দ শুনে ১০৭ নং রুমে অবস্থানরত অন্যান্য রাজাকাররা পালিয়ে যায়। এদের একজন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকলে সেও মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির আঘাতে নিহত হয়। একই দিনে তারা ২১৯নং রুমে হামলা চালায়। এই গ্রুপটি কলেজ-ডি সেকশন হলেও বোমা চালিয়েছিল।

এই কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্রী নিপা লাহিড়ী যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে যাবার পথে ফতুল্লাতে নিহত হন। আর একজন ছাত্র সিরাজুল ইসলাম হাসপাতালে বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেতেন। তিনি রাতে হোস্টেলে না গিয়ে হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ডে ঘুমাতেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কিছু স্বাধীনতা বিরোধী ছাত্রের সহায়তায় তাকে ১১ ডিসেম্বর রাতে রাজাকার বাহিনী ক্যান্সার ওয়ার্ড থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করে।

তৎকালীন সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের সদস্যদের মধ্যে স্কোয়াড্রন লীডার এম শামসুল হক, মেজর খুরশীদ, মেজর শামসুল আলম, ক্যাপ্টেন আব্দুল লতিফ মল্লিক, ক্যাপ্টেন মোশায়েফ হোসেন, ক্যাপ্টেন আঃ মান্নান, লে আখতার, লে নুরুল ইসলাম প্রমুখ অফিসারবৃন্দ বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত ছিলেন। এদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ক্যাপ্টেন খুরশীদ বীরউত্তম ও লে আখতার বীরপ্রতীক উপাধি পেয়েছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের যে সমস্ত সদস্য শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে ডা. লে ক এ এফ জিয়াউর রহমান, ডা. মেজর আসাদুল হক, ডা. লে আমিনুল হক, ডা. লে খন্দকার আবু জাফর মোঃ নূরুল ইমাম প্রমুখ ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত প্রায় সকল চিকিৎসকই আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন। মুক্তিযোদ্ধারা আসল নাম গোপন রেখে হাসপাতালে ভর্তি হতেন। হাসপাতালে এই সমস্ত কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব্‌ পালন করতেন অধ্যাপক ফজলে রাব্বি। তিনি তার আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করতেন মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। শহীদ অধ্যাপক আলিম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে কর্মরত থাকলেও বেশিরভাগ সময় কাটাতেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা অনেক চিকিৎসক ভারতে গিয়ে বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঐ সমস্ত চিকিৎসকদের অনেকে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন। আবার কেউ আহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের চিকিৎসা করেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশকৃত চিকিৎসকদের মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা হলেন- ডা. শিশির মজুমদার, ডা. সরওয়ার আলী, অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ডা. মাকসুদা নার্গিস, ডা. কাজি তামান্না, ডা. ফৌজিয়া মোসলেম ও ডা. সমীর কুমার শর্মা প্রমুখ (অনেকের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি)। দেশের ভিতর থেকে অসংখ্য চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে অনেককে জীবন দিতে হয়েছে।[১৬]

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা চিকিৎসক, তৎকালীন ছাত্রছাত্রী এবং এই কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের তালিকা:

  • ডা. মো. ফজলে রাব্বি
  • ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরী
  • ডা. সামসুদ্দিন আহমেদ
  • ডা. আজহারুল হক
  • ডা. এ বি এম হুমায়ূন কবির
  • ডা. সুলেমান খান
  • ডা. গোলাম মর্তুজা
  • ডা. আব্দুল জব্বার
  • ডা. নরেন ঘোষ
  • ডা. জিকরুল হক
  • ডা. হাসিময় হাজরা
  • ডা. মফিজ উদ্দিন খান
  • ডা. গোপাল চন্দ্র সাহা
  • ডা. লে. ক. এ এফ জিয়াউর রহমান এ এম সি
  • ডা. লে. ক. এন এ এম জাহাঙ্গীর এ এম সি
  • ডা. মেজর রিয়াজুর রহমান এ এম সি
  • ডা. মেজর এ কে এম আসাদুল হক এ এম সি
  • ডা. লে. মোঃ আমিনুল হক এ এম সি
  • ডা. লে. খন্দকার আবু জাফর নূরুল ইমাম এ এম সি
  • মোঃ সিরাজুল ইসলাম (ছাত্র)
  • নীপা লাহিড়ী (ছাত্রী)
  • মোঃ হুমায়ুন ফরিদি (ছাত্র)
  • মোঃ হাসান শহিদ (ছাত্র)

নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসম্পাদনা

ডাক্তাররা এরশাদ সরকার ঘোষিত গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধে বিএমএর ব্যানারে ১৯৯০এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২৭ নভেম্বর পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) বিএমএর এমনই একটি সভায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে যাবার পথে এরশাদ সরকারের ভাড়াটিয়া গুণ্ডাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে-৩৪ ব্যাচের ছাত্র, ফিজিওলজি বিভাগের প্রভাষক ডাঃ শামসুল আলম খান মিলন

সংযুক্ত হাসপাতালসম্পাদনা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ভৌগোলিক অবস্থান
অবস্থানঢাকা, বাংলাদেশ
সংস্থা
তহবিলস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ধরনসরকারি
অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস্
পৃষ্ঠপোষকব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হক
সংযোগ
ওয়েবসাইটdmch.gov.bd

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজের সংযুক্ত হাসপাতাল। এটি উক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োগের ক্ষেত্র। হাসপাতালটি ঢাকা নার্সিং কলেজসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি নার্সিং কলেজ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

ইতিহাসসম্পাদনা

ভবনসম্পাদনা

হাসপাতালের একাংশ
জরুরী ভবন

১৯০৪ সালে নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের সচিবালয় হিসেবে ভবনটি স্থাপিত হয়। নতুন প্রদেশের স্বল্পস্থায়ী মেয়াদে এটি সচিবালয় হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ১৯২১ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করে, ভবনটির কর্তৃত্ব পায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই সময় বিশাল এই ভবনের একপাশে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার, একাংশে ছিল ছাত্রদের ডরমেটরি এবং বাকি অংশ কলা অনুষদের প্রশাসনিক শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তখন পুরো ভবনটিতেই স্থাপিত হয় ‘আমেরিকান বেস হাসপাতাল’। তবে যুদ্ধ শেষে মার্কিনীরা চলে গেলেও ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি থেকে যায়।

বৃহৎ এ হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ২৩০০। তবে এটি প্রতিদিন প্রায় ৩৫০০ রোগিকে অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও বিশেষায়িত ক্লিনিকগুলোতে অনেক রোগী দৈনিকসেবা নিয়ে থাকে।

ব্যবস্থাপনাসম্পাদনা

হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন হাসপাতালের পরিচালক। উপ পরিচালক ও সহকারী পরিচালকগণ এ ব্যাপারে তার সহায়ক হন। হাসপাতালের পরামর্শক, আবাসিক চিকিৎসক, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, মেডিকেল অফিসার, ইন্টার্নসহ, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ও কর্মচারীগণ পরিচালকের নিকট দায়বদ্ধ থাকেন। এছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকবৃন্দ সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ আধিকারিক হিসেবে চিকিৎসা কার্যক্রমের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকেন।

ছাত্রাবাসসম্পাদনা

তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রমেশচন্দ্র মজুমদার ছাত্রদের আবাসনের ব্যবস্থা করেন। এ সময় মুসলমান ছাত্ররা সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে, হিন্দু ছাত্ররা ঢাকা হলে (বর্তমানে ড. মুহম্মদ শহীদুলাহ্ হল), খ্রিস্টান ছাত্ররা সদরঘাটের ব্যাপ্টিস্ট মিশনে থাকত। আর ছাত্রীরা থাকত নার্সিং হোস্টেলে। ১৯৪৭ সালে বর্তমান নার্সিং ইনস্টিটিউটের স্থানে নিজস্ব ছাত্রী হোস্টেল স্থাপিত হয়। প্রথমে ১১টি, পরে আরো দুই দফায় ৬টি ও ৩টি মোট ২০টি ব্যারাক নির্মিত হয়।

বর্তমানে যে ছাত্রী হলটি ‘ডাঃ মিলন হল’ নামে পরিচিত, তা ১৯৯২ সালের পূর্বে ডাঃ আলীম চৌধুরী হলেরই অংশ ছিল। এ হলে রয়েছে ১১৬টি রুম।

শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

ছাত্রদের বকশীবাজার মোড়ের বর্তমান হলটি নির্মিত হয় ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সালে। ১৯৭২ সালে যার নামকরণ করা হয় ‘শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বি’র নামে। এই হল এ একটি মূল ভবন ও ৩ টি ব্লকসহ মোট রুম এর সংখ্যা ২২৫ যা এমবিবিএস প্রথম বর্ষ থেকে পঞ্চম বর্ষ পর্যন্ত ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত।

১৯৭৪-৭৫ সালে ইন্টার্নি ডাক্তারদের জন্য শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বি হলের পাশে পৃথক হোস্টেল প্রতিষ্ঠিত হয়, পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় ‘শহীদ ডাঃ মিলন ইন্টার্নি হোস্টেল’। এর পূর্বে ইন্টার্নি ডাক্তাররা চাঁনখারপুলের কাছে ওল্ড পিজি হোস্টেলে থাকত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলামনি ট্রাস্টসম্পাদনা

ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ১৯৮৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলামনি ট্রাস্ট গঠিত হয়। এর অফিস ঢাকা মেডিকেল কলেজ ভবনের নিচতলায় অবস্থিত।

অধ্যক্ষগণের তালিকাসম্পাদনা

শুরু থেকে অদ্যাবধি যাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন:

মেজর উইলিয়াম জন ভারজিন, ঢামেকের প্রথম অধ্যক্ষ
ক্রমনামমেয়াদকাল
শুরুপর্যন্ত
১.ডা. মেজর উইলিয়াম জন ভারজিন০১.০৭.১৯৪৬১৪.০৮.১৯৪৭
২.ডা. লে. কর্নেল এডওয়ার্ড জর্জ মন্টোগোমেরি১৫.০৮.১৯৪৭১৯.০৭.১৯৪৮
৩.অধ্যাপক টি আহমেদ১৯.০৭.১৯৪৮০১.০১.১৯৫২
৪.ডা. কর্নেল এম কে আফ্রিদি০১.০১.১৯৫২২০.০৩.১৯৫৩
৫.অধ্যাপক নওয়াব আলী২১.০৩.১৯৫৩১০.০৪.১৯৫৪
৬.অধ্যাপক এ কে এম এ ওয়াহেদ১১.০৪.১৯৫৪২০.০১.১৯৫৫
৭.অধ্যাপক নওয়াব আলী২১.০১.১৯৫৫০১.০২.১৯৫৭
৮.অধ্যাপক মো. রেফাত উল্লাহ০১.০২.১৯৫৭০১.০৯.১৯৫৮
৯.অধ্যাপক হাবিব উদ্দীন আহমেদ০২.০৯.১৯৫৮০৪.০৬.১৯৫৯
১০.ডা. লে. ক. এম এম হক০৪.০৬.১৯৫৯১১.০৯.১৯৬৩
১১.অধ্যাপক এ কে এস আহমেদ১৯.০৯.১৯৬৩২৮.১২.১৯৬৩
১২.ডা. গোলাম কিবরিয়া২৮.১২.১৯৬৩০৮.০২.১৯৬৪
১৩.ডা. লে. ক. বোরহানুদ্দীন০৯.০২.১৯৬৪২৭.০১.১৯৬৯
১৪.অধ্যাপক কে এ খালেদ২৭.০১.১৯৬৯৩০.১২.১৯৭০
১৫.ডা. সাইফুুুল্লাহ০১.০১.১৯৭১২০.০৫.১৯৭১
১৬.অধ্যাপক এম আর চৌধুরী২৫.০৫.১৯৭১০২.০৭.১৯৭৪
১৭.অধ্যাপক এম এ জলিল০৩.০৭.১৯৭৪০৬.০৫.১৯৭৬
১৮.অধ্যাপক এম এ কাশেম০৭.০৫.১৯৭৬০১.১০.১৯৭৮
১৯.অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ০২.১০.১৯৭৮২৫.১১.১৯৮০
২০.অধ্যাপক মাজহারুল ইমাম২৫.১১.১৯৮০০১.১০.১৯৮১
২১.অধ্যাপক এম এ মাজেদ০১.১০.১৯৮১০২.০৭.১৯৮২
২২.অধ্যাপক এম আই চৌধুরী০২.০৭.১৯৮২৩১.০১.১৯৮৫
২৩.অধ্যাপক মির্জা মাজহারুল ইসলাম৩১.০১.১৯৮৫১৩.১২.১৯৮৬
২৪.অধ্যাপক ওয়ালিউল্লাহ১৩.১২.১৯৮৬৩০.০১.১৯৯০
২৫.অধ্যাপক এম. কবিরউদ্দীন আহমেদ৩১.০১.১৯৯০৩০.০৩.১৯৯১
২৬.অধ্যাপক জওয়াহুরুল মাওলা চৌধুরী৩০.০৩.১৯৯১১৪.০১.১৯৯৫
২৭.অধ্যাপক মো. শফিউল্লাহ১৪.০১.১৯৯৫২২.০১.১৯৯৫
২৮.অধ্যাপক এম এ হাদী২২.০১.১৯৯৫১৮.০৭.১৯৯৬
২৯.অধ্যাপক এ বি এম আহসান উল্লাহ১৮.০৭.১৯৯৬১৯.০৯.১৯৯৯
৩০.অধ্যাপক এ কে এম শহীদুল ইসলাম১৯.০৯.১৯৯৯২৯.০৮.২০০১
৩১.অধ্যাপক মো. আবদুুুল কাদির খান২৯.০৮.২০০১১৫.১১.২০০১
৩২.অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ১৫.১১.২০০১০৭.০৮.২০০৩
৩৩.অধ্যাপক মো. ফজলুুুল হক০৭.০৮.২০০৩২৯.০৯.২০০৩
৩৪.অধ্যাপক হোসনেে আরা তাহমিন (চারু)২৯.০৯.২০০৩২৬.০৬.২০০৬
৩৫.অধ্যাপক সৈয়দ মাহবুবুল আলম২০.০৬.২০০৬০১.০৩.২০০৭
৩৬অধ্যাপক এম আবুুুল ফয়েজ০১.০৩.২০০৭০৭.০১.২০০৮
৩৭.অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ১৭.০১.২০০৮০৯.০১.২০১৪
৩৮.অধ্যাপক মো. ইসমাইল খান০৯.০১.২০১৪১৩.০৫.২০১৭
৩৯.অধ্যাপক শফিকুল আলম চৌধুরী (ভারপ্রাপ্ত)১৩.০৫.২০১৭১৩.০৬.২০১৭
৪০.অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ১৩.০৬.২০১৭৩১.১২.২০২০
৪১.অধ্যাপক মোঃ টিটো মিঞা[১৭]০১.০১.২০২১

ছাত্র সংসদসম্পাদনা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ (ঢামেকসু) কলেজের ছাত্র কল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য নির্বাচিত ছাত্র সদস্যদের সংগঠন। ঢামেকসু তার জন্মলগ্ন হতেই তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অন্য এক উচ্চতায় আরোহণ করে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢামেকসুর তৎকালীন সহ-সভাপতি গোলাম মাওলা সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।[১৮]

বিশিষ্ট প্রাক্তনীসম্পাদনা

আরও পড়ুনসম্পাদনা

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

বহিঃসংযোগসম্পাদনা

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগবদরের যুদ্ধআনন্দবাজার পত্রিকাবাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলইসলামবাংলাদেশব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলদোয়া কুনুতফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলা ভাষাআবহাওয়াআর্জেন্টিনাআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাশেখ মুজিবুর রহমানমিয়া খলিফাকোস্টা রিকা জাতীয় ফুটবল দলরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুম্বই ইন্ডিয়ান্সবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহযাকাতলিওনেল মেসিফিতরামুহাম্মাদইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনকুরআনের সূরাসমূহের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলক্লিওপেট্রাচেক প্রজাতন্ত্রইউটিউবকাজী নজরুল ইসলামদোলযাত্রাআসসালামু আলাইকুমবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাশিয়া ইসলামচেন্নাই সুপার কিংসকুরআনবিকাশআয়াতুল কুরসিমৌলিক পদার্থের তালিকাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধছয় দফা আন্দোলনশাকিব খানসানরাইজার্স হায়দ্রাবাদভুটানসৌদি আরবআল্লাহর ৯৯টি নাম২০২৪ কোপা আমেরিকাবিশ্ব থিয়েটার দিবসবাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের তালিকাপহেলা বৈশাখসেজদার আয়াতভারতপদ্মা সেতুদৈনিক প্রথম আলোঢাকা মেট্রোরেলভূমি পরিমাপশেখ হাসিনাবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহওয়ালাইকুমুস-সালামভৌগোলিক নির্দেশকবদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাদের তালিকাযৌনসঙ্গমবাংলাদেশী টাকাইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিকম্পিউটারহজ্জটুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকের রেকর্ড তালিকাবাংলা বাগধারার তালিকানেপোলিয়ন বোনাপার্টবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাবিভিন্ন দেশের মুদ্রাটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাবাংলা ভাষা আন্দোলন২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব২৭ মার্চজনি সিন্সবাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২সাহাবিদের তালিকাঅকাল বীর্যপাত২০২৩ট্রাভিস হেডন্যাটোমুহাম্মাদের স্ত্রীগণলিঙ্গ উত্থান ত্রুটিমাইকেল মধুসূদন দত্তজানাজার নামাজব্রাজিলমহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলবসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রডুগংমুস্তাফিজুর রহমানবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীপশ্চিমবঙ্গফরাসি বিপ্লব