উত্তর আমেরিকা

একটি মহাদেশ

উত্তর আমেরিকা হল উত্তর এবং পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত একটি মহাদেশ। একে কখনো আমেরিকার উত্তর উপমহাদেশও ধরা হয়।[১] মহাদেশটির উত্তরে উত্তর মহাসাগর, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় সাগর অবস্থিত। এর আয়তন ২৪,৭০৯,০০০ বর্গ কি.মি. (৯,৫৪০,০০০ বর্গ মাইল), যা পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় ৪.৮% এবং ভূ-পৃষ্ঠের ১৬.৫% জুড়ে বিস্তৃত এবং আয়তনের দিক থেকে উত্তর আমেরিকা এশিয়া ও আফ্রিকার পরে ৩য় বৃহত্তম এবং জনসংখ্যা হিসেবে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের পরে চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। [২][৩] ২০০৭ সালে উত্তর আমেরিকা মহাদেশে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫২ কোটি।

উত্তর আমেরিকা
আয়তন২,৪৭,০৯,০০০ কিমি (৯৫,৪০,০০০ মা)
জনসংখ্যা৫৬৫,২৬৫,০০০ (২০১৩, ৪র্থ)
জনঘনত্ব২২.৯/কিমি (৫৯.৩/বর্গ মাইল)[note ১]
জিডিপি (পিপিপি)$২০.৯ ট্রিলিয়ন (২০১৩, ২য়)
জিডিপি (মনোনীত)$২০.৩ ট্রিলিয়ন (২০১৩, ২য়)
জাতীয়তাসূচক বিশেষণউত্তর আমেরিকান
দেশসমূহ২৩
অধীনস্থ অঞ্চলসমূহ২২ (দেখুন দেশগুলোর তালিকা)
ভাষাসমূহইংরেজি, স্পেনীয়, ফরাসি, এবং আরো অন্যান্য
সময় অঞ্চলসমূহইউটিসি-১০ থেকে ইউটিসি
বৃহত্তম শহরসমূহজনসংখ্যা অনুসারে উত্তর আমেরিকার শহরের তালিকা
মেক্সিকো মেক্সিকো সিটি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিউ ইয়র্ক শহর
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লস অ্যাঞ্জেলেস
কানাডা টরোন্টো
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শিকাগো
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিউস্টন
কিউবা হাভানা
মেক্সিকো গুয়াদালাজারা
কানাডা মন্ট্রিয়ল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলাডেলফিয়া
উত্তর আমেরিকার জনবহুল অংশের মানচিত্র ২০১৮ অনুসারে Mercator প্রজেকশনে দৈহিক, রাজনৈতিক এবং জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য দেখায় (QGIS এবং CC-0 প্রাকৃতিক আর্থ জিওডাটা ব্যবহার করে সংকলিত)

২০১৩ সালের আদমশুমারি মতে নিকটবর্তী ক্যারিবীয় দ্বীপাঞ্চলসহ উত্তর আমেরিকার জনসংখ্যা ছিল ৫৬৫ মিলিয়ন, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭.৫ ভাগ। ইতিহাস মতে, সর্বশেষ বরফ যুগের সময় বেরিং ভূসেতু অতিক্রম করে উত্তর আমেরিকাতে প্রথম মানব বসতি শুরু হয় এবং তথাকথিত প্রত্ন-ভারতীয় যুগের সমাপ্তি হয় প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে মধ্য-ভারতীয় যুগের শুরুতে। ধ্রুপদী যুগ ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে ১৩তম শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। প্রাক-কলাম্বীয় যুগের সমাপ্তি ঘটে ইউরোপীয়দের আগমনের সাথে সাথে আবিষ্কার যুগ এবং আধুনিক যুগের শুরুতে। বর্তমান অধিবাসিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বিন্যাসে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক, আদিবাসী আমেরিকান, আফ্রিকীয় দাস ও তাদের বংশধরদের প্রভাব বিদ্যমান । তন্মধ্যে মহাদেশটির উত্তরাংশে ইউরোপীয় প্রভাব এবং দক্ষিণাংশে আদিবাসী আমেরিকান ও আফ্রিকীয় প্রভাব সুস্পষ্ট। মহাদেশটিতে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে অধিকাংশ উত্তর আমেরিকীরা মূলত ইংরেজি, স্পেনীয় ও ফরাসি ভাষায় কথা বলে এবং সেখানকার চলমান সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাগুলি সাধারণত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে।

ব্যুৎপত্তিসম্পাদনা

১৬২১ সালের উত্তর আমেরিকার মানচিত্র।

জার্মান মানচিত্রবিদ মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলার এবং ম্যাথিয়াস রিংম্যান একত্রে ইতালীয় পরিব্রাজক আমিরিগো ভেসপুচ্চির নামানুসারে এই অঞ্চলটির নামকরণ করেন দ্যা আমেরিকাস[৪]। ভেসপুচ্চি ১৯৪৭ এবং ১৫০২ সালের কোন এক সময়ে দক্ষিণ আমেরিকা পরিভ্রমণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রথম ইউরোপিয়ান পরিব্রাজক যিনি আমেরিকা এসেছিলেন। তার মতে, আমেরিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ নয়, বরং এটি একটি স্বতন্ত্র ভূমি যেটি ইউরোপিয়ানদের কাছে অজানা ছিল। ১৫০৭ সালে, ওয়াল্ডসিমুলার প্রদত্ত পৃথিবীর মানচিত্রে তিনি বর্তমান দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল অংশটিকে সর্বপ্রথম "আমেরিকা" নামকরণ করেন। তিনি তার কসমোগ্রাফি ইনট্রোডাকটো বইয়ে এই নামকরণের কারণ যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা সহ বর্ণনা করেন এভাবে:[৫]

... এবি আমেরিকো ইনভেন্টোরি ... কুয়েশি আমেরিকি সিভ আমেরিকাম (অর্থঃ পরিব্রাজক আমেরিকাস হতে বর্ণিত .. এটি ছিল আমেরিকাসের ভূমি, নাম আমেরিকা।)।

ওয়াল্ডসিমুলারের নামকরণের পর এটা নিয়ে আর কেউ আপত্তি জানায়নি। যদিও তিনি ভেসপুচ্চির ল্যাটিন নামানুসারে (আমেরিকাস ভেসপুচ্চিয়াস), নামকরণ করেছিলেন তথাপি ইউরোপা, এশিয়া এবং আফ্রিকার মতো স্ত্রীবাচক নামকরণ করে আমেরিকা নামে বদলে ফেলা হয়।

পরবর্তিতে অন্যান্য মানচিত্রবিদরা উত্তরের শেষ বিন্দু পর্যন্ত মহাদেশের নাম আমেরিকা প্রদান করে। ১৫৩৮ সালে, জেরার্ড মার্কেটোর তার প্রণিত মানচিত্রে পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধের পুরোটাকেই আমেরিকা নামে চিহ্নিত করেন[৬]

আমেরিকার নামকরণ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে আমেরিকার নামকরণ আমেরিগো ভেসপুচ্চির নামানুসারে হয়েছে, কিন্তু এই তত্ত্বে অনেকে বিশ্বাসী নয়[৭]। ১৯৪৯ সালে, রিকার্ডো পাল্মা একটি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন যাতে তিনি বলেন," মধ্য আমেরিকার আমেরিক পর্বতমালা এবং দক্ষিণ আমেরিকা উভয়য়েরই আবিস্কারক ভেসপু্চ্চি" যা কিনা ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এর আবিস্কারের সাথে মিলে গেছে।

আলফ্রেড ই. হুডের ১৯০৮ সালের তত্ত্ব মতে "মহাদেশগুলোর নামকরণ করা হয় রিচার্ড আমরিক নামের এক ব্রিস্টলের অধিবাসী বণিকের নামানুসারে। কেননা তিনি ১৪৯৭ সালে জন কবেট এর ইংল্যান্ড থেকে নতুন এলাকা আবিস্কারের প্রকল্পে অর্থায়ন করেন"। আরেকটি বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বলা হয় আমেরিকার নামকরণ করা হয়েছিল একজন স্পানিশ নাবিকের নামে যিনি কিনা প্রাচীন ভিসিগোথিক গোষ্ঠীর আমেরিক। আরেকটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, আদিবাসী আমেরিকান ভাষার শব্দ থেকেই মহাদেশটির নামকরণ করা হয়েছে[৬]

ব্যাপ্তিসম্পাদনা

"উত্তর আমেরিকা" নামের অর্থ স্থানানুসারে এবং বিষয়ানুসারে আলাদা। কানাডিয়ান ইংরেজিতে, "উত্তর আমেরিকা" বলতে বুঝায় একসাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাকে[৮]। অন্যদিকে, মাঝে মাঝে গ্রীনল্যান্ড[৯][১০][১১] এবং মেক্সিকোর (নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট অনুসারে)[১০][১২][১৩][১৪] পাশাপাশি সমুদ্র মধ্যবর্তি দ্বীপসমূহকেও বোঝানো হয়ে থাকে। জাতিসংঘের জিও স্কিম অনুসারে "নর্থ আমেরিকা"র অঞ্চলগুলো হলো মেক্সিকো থেকে উত্তরে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা পর্যন্ত, পাশাপাশি মধ্য আমেরিকার কিছু অঞ্চল সহ ক্যারিবিয়ান দেশসমূহ। এছাড়াও কানাডিয়ান আর্কটিক অঞ্চলসমূহের মধ্যে গ্রীনল্যান্ডকেও ধরা হয়ে থাকে নর্থ আমেরিকান টেকটোনিক প্লেট অনুসারে।

ইরানসহ বেশকিছু রোমান ভাষাভাষী সংস্কৃতিতে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ বলতে বোঝান হয়ে থাকে মূলত কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং মাঝে মাঝে গ্রীনল্যান্ড, সেইন্ট প্যারি এট মিক্যুইলন এবং বারমুডাকে[১৫]

উত্তর আমেরিকাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ডাকা হত। যেমন স্পেনীয় নর্থ আমেরিকা (নিউ স্পেন) ছিল উত্তরাঞ্চলীয় আমেরিকার পূর্বনাম, এবং এটি ছিল মেক্সিকোর প্রথম সাংবিধানিক নাম[১৬]

অঞ্চলসমূহসম্পাদনা

ভৌগলিকভাবে উত্তর আমেরিকা মহাদেশটি বেশকিছু অঞ্চল এবং উপঅঞ্চলে বিভক্ত। এদের মধ্যে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং ভৌগোলিক অঞ্চল অবস্থিত। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ মূলত বিভিন্ন বাণিজ্য এলাকা দিয়ে গঠিত, যেমন: নর্থ আমেরিকান বাণিজ্য চুক্তি এলাকা এবং সেন্ট্রাল আমেরিকান বাণিজ্য চুক্তি এলাকা ইত্যাদি। ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিকভাবে, মহাদেশটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় অ্যাঙ্গলো-আমেরিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকা। অ্যাঙ্গলো-আমেরিকা বলতে বুঝায় উত্তরাঞ্চলীয় আমেরিকা, বেলিজ, এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ সেই সাথে ইংরেজি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী (যদিও উপআঞ্চলিক এলাকা, যেমন লুইজিয়ানা এবং কিউবিক, আর ফ্রান্সোফনিক জনগোষ্ঠী এর আওতাধীন নয়)। ল্যাটিন আমেরিকা বলতে বোঝানো হয় সাধারনত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের অঞ্চল মেক্সিকো, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানা এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপূঞ্জ ইত্যাদিকে।

উত্তর আমেরিকা মহাদেশটির দক্ষিণাংশকে দুটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চল[১৭][১৮]। একইভাবে মহাদেশটির উত্তরাংশকেও কিছু অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়। যদিও উত্তর আমেরিকার সংজ্ঞানুযায়ী পুরো মহাদেশটিকেই বোঝায় হয়। আবার উত্তর আমেরিকা বলতে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং গ্রীনল্যান্ডকেও বোঝায়।[৯][১০][১১][১২][১৯]

উত্তর আমেরিকা পরিভাষা দ্বারা বোঝায় পুরো উত্তরাঞ্চলীয় দেশসমূহ এবং উত্তর আমেরিকার অধীনস্থ অঞ্চলসমূহসহ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রীনল্যান্ড, বারমুডা, এবং সেন্ট প্যারি ও ম্যাকুইলন[২০][২১]। যদিও খুব কম ব্যবহৃত[তথ্যসূত্র প্রয়োজন], মিডল আমেরিকা বলতে মধ্য পশ্চিম আমেরিকা অর্থাৎ মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান এবং মেক্সিকোকে বোঝায় না[২২]

মহাদেশটির সর্ববৃহৎ দেশ কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে সুনির্দিষ্ট অঞ্চল। যেমন কানাডার অঞ্চলগুলো হলো ব্রিটিশ কলম্বিয়া কোস্ট, কানাডিয়ান প্রেইরি, মধ্য কানাডা, আটলান্টিক কানাডা এবং উত্তর কানাডা। এই অঞ্চল গুলোর আবার কিছু উপাঞ্চল আছে। তেমনি ইউএস পরিসংখ্যান ব্যুরো মতে যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চলগুলো হলো: নিউ ইংল্যান্ড, মিড-আটলান্টিক, ইস্ট নর্থ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, ওয়েস্ট নর্থ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, সাউথ আটলান্টিক স্টেস্টস্, ই্স্ট সাউথ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, ওয়েস্ট সাউথ সেন্ট্রাল স্টেস্টস্, মাউন্টেইন স্টেস্টস্ এবং প্যাসিফিক স্টেস্টস্। দেশ দুটির মধ্যবর্তি অঞ্চলটি হলো গ্রেট লেক রিজিওন। প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট এবং গ্রেট লেক মেগারিজিওন এর মধ্যর্বতি মেগাপলিস গুলো মূলত কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশ নিয়েই গড়ে উঠেছে।

ভূগোল ও ব্যাপ্তিসম্পাদনা

দেশ, অঞ্চল, এবং অধীনস্থ অঞ্চলসমূহসম্পাদনা

দেশ অথবা অঞ্চল[১৩][১৪]আয়তন
বর্গকি.মি.[২৩]
জনসংখ্যা
(প্রাক্কলন ২০০৮)[২৪]
জনসংখ্যার ঘনত্ব
প্রতি বর্গকি.মি.
রাজধানী
 অ্যাঙ্গুইলা (যুক্তরাজ্য)৯১১৫,০০০১৬৪.৮দ্যা ভ্যালি
 অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা৪৪২৮৮,০০০১৯৯.১সেন্ট জোন্স
 আরুবা (নেদারল্যান্ডস)১৮০১,০৭,০০০৫৯৪.৪অর্জেন্সস্ট্যাড
 বাহামা দ্বীপপুঞ্জ[note ২]১৩,৯৪৩৩,৪২,০০০২৪.৫ন্যাসা
 বার্বাডোস৪৩০২,৫৬,০০০৫৯৫.৩ব্রিজটাউন
 বেলিজ২২,৯৬৬৩,০৭,০০০১৩.৪বেলমোপ্যান
 বারমুডা (যুক্তরাজ্য)৫৪৬৫,০০০১২০৩.৭হ্যামিল্টন
 Bonaire (নেদারল্যান্ডস)২৯৪১২,০৯৩[২৫]৪১.১কারলেন্ডি
 ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাজ্য)১৫১২৩,০০০১৫২.৩রোড টাউন
 কানাডা৯৯,৮৪,৬৭০৩,৩৫,৭৩,০০০৩.৪অটোয়া
 কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাজ্য)২৬৪৫৬,০০০২১২.১জর্জ টাউন
 Clipperton Island (ফ্রান্স)০.০ —
 কোস্টা রিকা৫১,১০০৪৫,৭৯,০০০৮৯.৬স্যান জোসে
 কিউবা১,০৯,৮৮৬১,১২,০৪,০০০১০২.০হাভানা
 কুরাকাও (নেদারল্যান্ডস)৪৪৪১,৪০,৭৯৪[২৫]৩১৭.১উইমস্ট্যাড
 ডোমিনিকা৭৫১৬৭,০০০৮৯.২রোজাও
 ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র৪৮,৬৭১১,০০,৯০,০০০২০৭.৩সেন্টো ডোমিংগ
 এল সালভাদোর২১,০৪১৬১,৬৩,০০০২৯৩.০সান সালভাদর
 গ্রিনল্যান্ড (ডেনমার্ক)২১,৬৬,০৮৬৫৭,০০০০.০২৬নুক
 গ্রেনাডা৩৪৪১,০৪,০০০৩০২.৩সেন্ট জর্জস
 গুয়াদলুপ (ফ্রান্স)১,৬২৮৪,০১,৭৮৪[২৬]২৪৬.৭ব্যাস-টেরা
 গুয়াতেমালা১,০৮,৮৮৯১,৪০,২৭,০০০১২৮.৮গুয়েতেমালা সিটি
 হাইতি২৭,৭৫০১,০০,৩৩,০০০৩৬১.৫পোর্ট-অব-প্রিন্স
 হন্ডুরাস১,১২,৪৯২৭৪,৬৬,০০০৬৬.৪তেগুচিগাল্পা
 জ্যামাইকা১০,৯৯১২৭,১৯,০০০২৪৭.৪কিংসটন
 মার্তিনিক (ফ্রান্স)১,১২৮৩,৯৭,৬৯৩[২৭]৩৫২.৬ফোর্ট-দ্যা-ফ্রান্স
 মেক্সিকো১৯,৬৪,৩৭৫১১,২৩,২২,৭৫৭৫৭.১মেক্সিকো সিটি
 Montserrat (যুক্তরাজ্য)১০২৬,০০০৫৮.৮প্লেম্যাথ; Brades[note ৩]
 Navassa Island (যুক্তরাষ্ট্র)[২৮][২৯]০.০ —
 নিকারাগুয়া১,৩০,৩৭৩৫৭,৪৩,০০০৪৪.১মানাগুয়া
 পানামা[note ৪][note ৫]৭৫,৪১৭৩৪,৫৪,০০০৪৫.৮পানামা সিটি
 পুয়ের্তো রিকো (যুক্তরাষ্ট্র)৮,৮৭০৩৯,৮২,০০০৪৪৮.৯সেন জোয়ান
 Saba (নেদারল্যান্ডস)১৩১,৫৩৭[২৫]১১৮.২দ্যা বটম
 Saint Barthélemy (ফ্রান্স)২১[২৮]৭,৪৪৮[২৯]৩৫৪.৭গুস্তাভিয়া
 সেন্ট কিট্‌স ও নেভিস২৬১৫২,০০০১৯৯.২বস্টিয়ার
 সেন্ট লুসিয়া৫৩৯১,৭২,০০০৩১৯.১ক্যাস্ট্রিস
 Saint Martin (ফ্রান্স)৫৪[২৮]২৯,৮২০[২৯]৫৫২.২ম্যারিগট
 সাঁ পিয়ের ও মিক‌লোঁ (ফ্রান্স)২৪২৬,০০০২৪.৮সেইন্ট-পিয়েরে
 সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন দ্বীপপুঞ্জ৩৮৯১,০৯,০০০২৮০.২কিংসটন
 Sint Eustatius (নেদারল্যান্ডস)২১২,৭৩৯[২৫]১৩০.৪অর্জেন্সস্ট্যাড
 সিন্ট মার্টেন (নেদারল্যান্ডস)৩৪৪০,০০৯[২৫]১১৭৬.৭ফিলিপসবার্গ
 ত্রিনিদাদ ও টোবাগো[note ৪]৫,১৩০১৩,৩৯,০০০২৬১.০পোর্ট অব স্পেন
 টার্কস ও কেইকোস দ্বীপপুঞ্জ[note ৬] (যুক্তরাজ্য)৯৪৮৩৩,০০০৩৪.৮ককবার্ণ টাউন
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[note ৭]৯৬,২৯,০৯১৩১,১৬,৩০,০০০৩২.৭ওয়াশিংটন, ডি.সি.
 মার্কিন ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ (যুক্তরাষ্ট্র)৩৪৭১,১০,০০০৩১৭.০কার্লট অ্যামালাই
মোট২,৪৫,০০,৯৯৫৫৪,১৭,২০,৪৪০২২.৯


জলবায়ূসম্পাদনা

যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক প্রদেশসম্পাদনা

নিচের ৪৮টি মার্কিন রাজ্যকে পাঁচটি প্রাকৃতিক প্রদেশে ভাগ করা যায়:

  1. দ্য আমেরিকান কার্ডিলেরা।
  2. দ্য কানাডিয়ান শিল্ড।[৩০]
  3. দ্য স্টেবল প্লাটফর্ম।
  4. দ্য কোস্টাল প্লেন।
  5. দ্য অ্যাপালাচেইন অর্গানিক বেল্ট।

আলাস্কার বেশির ভাগ অঞ্চলই কর্ডিলেরা, অন্যদিকে হ্ওায়াইয়ের বেশির ভাগ দ্বীপ নিওজিন আগ্নেয়শিলার উদগিরনে তৈরী একটি উষ্ণস্থান।

North America bedrock and terrain
North American cratons and basement rocks

জনমিতিসম্পাদনা

অর্থনৈতিক ভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা হলো উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে ধনী এবং উন্নত দেশ, এরপরেই আছে মেক্সিকো, যেটি নতুন শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিবেচিত[৩১]। মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোতে বৈচিত্রপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং মানব উন্নতি সূচক বিদ্যমান। উদাহরণ স্বরূপ, ছোট ছোট ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর (যেমনঃ বার্বাডোস, ট্রিনিদাদ এন্ড টোবাকো এবং অ্যান্টিগুয়া এন্ড বারমুডা) জিডিপি (পিপিপি) মেক্সিকোর চেয়েও বেশি, কারণ এসব দেশগুলোর জনসংখ্যা অনেক কম। অন্যদিকে পানামা এবং কোস্টারিকার মানব উন্নতি সূচক এবং জিডিপি অন্যান্ন ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোর তুলনায় বেশি[৩২]। উপরন্তু, গ্রীনল্যান্ডের খনিজ তেল এবং অন্যান্ন দামি খনিজদ্রব্য থাকা স্বত্ত্বেও দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে ডেনমার্কের মাছ ধরা, পর্যটন ইত্যাদির ওপর নির্ভর করতে হয়, কেননা গ্রীনল্যান্ডের খনিজদ্রব্যগুলো এখনও উত্তোলনের উদ্দোগ নেওয়া হয়নি, যদিও দ্বীপাঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নত।[৩৩]

জনসংখ্যার ভিত্তিতে উত্তর আমেরিকায় অনেক জাতিগত বৈচিত্র পরিলক্ষিত হয়। এখানকার প্রধান তিনটি জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম হল ককেশিয়ান, মেস্টিজো এবং কৃষ্ণাঙ্গরা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে ইন্ডিজিনিয়াস আমেরিকান এবং এশিয়ানরা উল্লেখযোগ্য।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ভাষাসম্পাদনা

উত্তর আমেরিকার প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ইংরেজি, স্পেনীয় এবং ফরাসি। গ্রীনল্যান্ড এবং এর আশেপাশের অঞ্চল গুলোর প্রধান ভাষা ডেনিস, অন্যদিকে ডাচ ক্যারিবিয়ানরাও স্থানীয় ভাষা হিসেবে ডেনিস ভাষা ব্যবহার করে। অ্যাঙ্গলো-আমেরিকান শব্দটি ব্যবহার করা হয় সেই সব দেশ সমূহকে বোঝাত যাদের প্রধান ভাষা ইংরেজি: বিশেষত কানাডা (ইংরেজি এবং ফরাসি সেখানকার দুটি সরকারি ভাষা) এবং যুক্তরাষ্ট্র, এছাড়াও মধ্য আমেরিকা এবং ক্রান্তীয় দেশসমূহকে (যেমন কমনওয়েলথ ক্যারিবিয়ান)। ল্যাটিন আমেরিকা বলতে বোঝানো হয় সাধারনত যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলকে (প্র্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের অঞ্চল), যেখানে ল্যাটিন, স্প্যানিস এবং পর্তূগীজ ভাষা হতে উদ্ভূত রোমান ভাষা প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত। এসব অঞ্চল গুলো হলো: মধ্য আমেরিকার কিছু দেশ (সবসময় ইংরেজি যাদের প্রধান ভাষা নয়), ক্যারিবিয়ানের কিছু দেশ (ওলন্দাজ, ইংরেজি এবং ফেঞ্চ ভাষাভাষী অঞ্চল সমূহ বাদে), মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগ অঞ্চল গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানা (ফ্রান্স) এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপূঞ্জ(ব্রিটিশ)।

ফেঞ্চ ভাষাটি উত্তর আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক ভাষা, এমনকি কিছু কিছু ধর্মে এই ভাষাটি্কে মর্যাদার আসনে অধীন করা হয়েছে। কানাডার ২টি সরকারি ভাষা। কিউবিক প্রদেশের প্রধান ভাষা ফেঞ্চ, সেখানকার ৯৫% মানুষ হয় ফরাসি অথবা ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। অন্যদিকে নিউ ব্রুন্সইউক প্রদেশে ইংরেজির পাশাপাশি ফেঞ্চ প্রধান ভাষা। অন্যান্য ফেঞ্চ ভাষাভাষী অঞ্চল গুলো হলোঃ অন্টারি‌ও প্রদেশ (সেখানকার সরকারি ভাষা ইংরেজি হলেও ৬০০,০০০ মানুষের ভাষা ফরাসি), ম্যানিটোবা প্রদেশ (সেখানকার ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি সরকারি ভাষা), ফরাসি পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং সাঁ পিয়ের এ মিক্যলোঁ, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা (এখানে ফরাসি একটি সরকারি ভাষা)। হাইতিকে ফরাসি ভাষা-ভাষী দেশ বলা যায় ঐতিহাসিক কারণে যদিও সেখানকার লোকেরা ফরাসির পাশাপাশি ক্রেওল ভাষাতেও কথা বলে। একইভাবে ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি এবং ফরাসি-অ্যান্টিলীয় ক্রেওল ভাষাতে কথা বলে সেন্ট লুসিয়া এবং ডমিনিকার কমনওয়েলথভূক্ত অঞ্চলসমূহ।

ধর্মসম্পাদনা

সর্বাধিক খৃষ্টান জনসংখ্যার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি.তে অবস্থিত ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রাল।

২০১২ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপানুযায়ী উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ ধর্ম খ্রিষ্টান। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর প্রায় ৭৭.৪% মানুষের ধর্ম খ্রিষ্টান[৩৪] তাছাড়া এই মহাদেশের বাকি ২৩ টি দেশের বেশিরভাগ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী।[৩৫] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি, প্রায় ২৪৭ মিলিয়ন (৭০%) খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের আবাসস্থল। যদিও কিছু কিছু দেশে মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি (শতকরা হারে) খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর বসবাস।[৩৬] ব্রাজিলের পর মেক্সিকোই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্যাথলিক খ্রিষ্টান জনগোষ্টির আবাসস্থল।[৩৭]

এছাড়া কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৭.১% মানুষ ধর্মে বিশ্বাসী নয় (নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদীসহ)।[৩৮] যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার যথাক্রমে ২২.৮% এবং ২৩.৯% মানুষের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে উদাসিন( অর্থাৎ তারা সুনির্দিষ্ট কোন ধর্মের অণুসারী নয়)। [৩৯]

কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর প্রায় ৬ মিলিয়ন (১.৮%) মানুষ ইহুদি[৪০], প্রায় ৩.৮ মিলিয়ন (১.১%) মানুষ বৌদ্ধ[৪১] এবং প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন (১%) মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী।[৪২] পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস যুক্তরাষ্ট্র (৫.৪মিলিয়ন)[৪৩], কানাডা (৩৭৫,০০০)[৪৪] এবং মেক্সিকোতে (৬৭,৪৭৬)।[৪৫] উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস (প্রায় ২.৭ মিলিয়ন বা ০.৯%) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে,[৪৬][৪৭] অন্যদিকে কানাডায় প্রায় ১ মিলিয়ন ( মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩.২%) মুসলিম বসবাস করে[৪৮] এবং মেক্সিকোতে বসবাস করে ৩,৭০০জন।[৪৯] ২০১২ সালের ইউ-টি সান ডিয়াগোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ১.২ মিলিয়ন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ৪০% এর বসবাস দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াতে।[৫০]

মধ্য আমেরিকার প্রধান ধর্ম খ্রিষ্টান (প্রায় ৯৫.৬%)।[৫১] বিংশ শতাব্দীর পূর্বপর্যন্ত, ১৬শ শতকে মধ্য আমেরিকায় স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের কল্যাণে রোমান ক্যাথলিক ধর্ম অন্যতম প্রধান ধর্মে পরিণত হয়। ১৯৬০ এর দশকে অন্যান্য খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিশেষত প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদীদের ধর্মীয় সংগঠনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, পাশাপাশি ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে উদাসীন মানুষের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।তাছাড়া ক্যারিবিয়ান দেশসমূহে প্রধান ধর্ম খ্রিস্ট ধর্ম (প্রায় ৮৪.৭%) ।[৫১] ক্যারিবিয়াদের অন্যান্য ধর্মসমূহ হলো হিন্দুধর্ম, ইসলাম, রাস্তাফারি(জামাইকাতে )এবং অ্যাফ্রো–আমেরিকান ধর্মসমূহ যেমন সান্টারিয়া এবং ভোদোও।

জনসাধারণসম্পাদনা

উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ৩১৮.৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে প্রধান জনবহুল দেশ[৫২]। দ্বিতীয় জনবহুল দেশ মেক্সিকো (জনসংখ্যা প্রায় ১১২.৩২ মিলিয়ন)[৫৩] অন্যদিকে কানাডা তৃতীয় (জনসংখ্যা ৩২.৬২ মিলিয়ন)[৫৪]। কিউবা, ডোমিনিক রিপাবলিক, হাইতি, পুওটারিকো (যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ অঞ্চল), জ্যামাইকা এবং ট্রানিদাদ এন্ড টোবাকো ব্যতীত অন্যান্য ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোর জনসংখ্যা ১ মিলিয়নের কম।[৫৫][৫৬][৫৭][৫৮][৫৯] যদিও গ্রীনল্যান্ডের আয়তন বিশাল (২,১৬৬,০০০ বর্গকি.মি.), তবুও সেখানকার জনসংখ্যা ঘনত্ব (০.০৩জন/বর্গকি.মি.) পৃথিবীর সবচেয়ে কম এবং গ্রীনল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৫৫,৯৮৫ জন[৬০]

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এবং মেক্সিকোর জনসংখ্যা ঘনত্ব উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বেশি এবং বড় বড় শহর গুলো এই দেশগুলোতেই অবস্থিত। ক্যারিবিয়ান দেশ গুলোতেও বেশকিছু বড় শহর অবস্থিত। উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ শহর যথাসম্ভব মেক্সিকো সিটি এবং নিউ ইয়র্ক্। এই দু’টি শহরই হলো উত্তর আমেরিকার ৮ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা বসবাসকারী শহর, যদিও আমেরিকা অঞ্চলে এরকম আরো শহর রয়েছে। আয়তনের হিসেবে সবচেয়ে বড় শহর গুলো হলো লস অ্যাঞ্জেলস্, টরেন্টো[৬১], শিকাগো, হাভানা, সান্ট ডোমিংগ এবং মন্ট্রিল। যুক্তরাষ্ট্রের সানবেল্ট অঞ্চলসমূহের শহর গুলো (যেমন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া, হুস্টন, ফনিক্স, মিয়ামী, আটলান্টা এবং লাস ভেগাস) দ্রুত বর্ধনশীল শহর হিসেবে পরিচিত। ফলশ্রুতিতে শহর গুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ১৯৪৫ দশকের বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তবর্তী মেক্সিকোর শহরগুলিও দ্রুত বর্ধনশীল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে টিযুয়ানা শহর (সান ডিয়াগো সীমান্তবর্তী) এ শহরে পুরো ল্যাটিন আমেরিকার অভিবাসী পাশাপাশি ইউরোপ এবং এশিয়ার অভিবাসীরা অবস্থান গেড়েছে। ফলাফল হিসেবে এসব শহর গুলিতে পানিস্বল্পতা দেখা দিচ্ছে[৬২]

উত্তর আমেরিকার দশটি মেট্রোপলিটনের আটটিই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। মেট্রোপলিটন শহর গুলোর জনসংখ্যা ৫.৫ মিলিয়নের বেশি, তেমনি কিছু শহর হলো নিউ ইয়র্ক সিটি মেট্রোপলিটন এলাকা, লস অ্যাঞ্জেলস মেট্রোপলিটন এলাকা, শিকাগো মেট্রোপলিটন এলাকা এবং ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ মেট্রোপ্লেক্স[৬৩]। গ্রেটার মেক্সিকো সিটি হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যবর্তি সর্বাধিক জনবহুল মেট্রোপলিটন শহর[৬৪]। অন্যদিকে কানাডার টরেন্টো মেট্রোপলিটন এলাকা দশটি বৃহৎ উত্তর আমেরিকান মেট্রোপলিটনের মধ্যে অন্যতম যার জনসংখ্যা ছয় মিলিয়ন[৬৫]। কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত এবং মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তবর্তী শহর গুলোতে আন্তর্জাতিক মেট্রোপলিটন শহর গড়ে উঠেছে। সীমান্তবর্তী শহরগুলোর মধ্যে ডেট্রয়েট-উইন্ডসোর এবং সান ডিয়াগো-টিযুয়ানা মেট্রোপলিটন গুলোর বাণিজ্যিক, অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক উন্নতি উল্লেখযোগ্য। এসব মেট্রোপলিটন গুলো মিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের জন্য বিশেষ উপযোগী। ২০০৪ সালের যোগাযোগ অংশিদারিত্ব গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, ডেট্রয়েট-উইন্ডসোর সীমান্ত দিয়ে প্রায় $১৩ বিলিয়ন বাণিজ্য এবং সানডিয়াগো-টিযুয়ানা সীমান্ত দিয়ে $২০ বিলিয়ন বাণিজ্য হয়েছে[৬৬][৬৭]

উত্তর আমেরিকা মহাদেশ হল মেট্রোপলিটন শহর গুলোর উন্নতির প্রত্যক্ষদর্শী। যুক্তরাষ্ট্রে এগারোটি বড় অঞ্চল আছে যেগুলো কিনা মেক্সিকো এবং কানাডার সাথে সীমান্ত বিনিময় করে। এই অঞ্চল গুলো হলো অ্যারিজোনা সান করিডোর, কাসাডিয়া, ফ্লোরিডা, ফ্রন্টরেঞ্জ, গ্রেট লেক মেগারিজিয়ন, গালফ কোস্ট মেগারিজিয়ন, উত্তর-পূর্ব মেগারিজিয়ন, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া, পিডমন্ট আটলান্টিক, সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এবং টেক্সাস ট্রায়াঙ্গেল[৬৮]। কানাডা এবং মেক্সিকোতেও মেগারিজিয়ন রয়েছে। এদের মধ্যে কিউবিক সিটি- উইন্ডসোর করিডোর, গোল্ডেন হর্সহো দুটিকে ধরা হয় গ্রেট লেক মেগারিজিওন এবং মেগাপলিস অব সেন্ট্রাল মেক্সিকো। অন্যদিকে ঐতিহ্যগতভাবে মেগারিজিওন হিসেবে ধরা হয় বোস্টন ওয়াশিংটন ডিসি করিডোরকে। ২০০০ সালের মেগারিজিয়নের বৈশিষ্ট্য অনুসারে গ্রেটলেক মেগাপলিস এর জনসংখ্যা হলো প্রায় ৫৩,৭৬৮,১২৫ জন[৬৯]

২০১৩ সালের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর জনমিতি অনুসারে উত্তর আমেরিকার প্রধান দশটি মেট্রেপলিটন শহর গুলো হলোঃ

মেট্রোপলিটন সমূহজনসংখ্যাআয়তনদেশ
মেক্সিকো সিটি২১,১৬৩,২২৬৭,৩৪৬ বর্গকিলোমিটার (২,৮৩৬ মা)
নিউ ইয়র্ক সিটি১৯,৯৪৯,৫০২১৭,৪০৫ বর্গকিলোমিটার (৬,৭২০ মা)
লস অ্যাঞ্জেলস১৩,১৩১,৪৩১১২,৫৬২ বর্গকিলোমিটার (৪,৮৫০ মা)
শিকাগো৯,৫৩৭,২৮৯২৪,৮১৪ বর্গকিলোমিটার (৯,৫৮১ মা)
ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ৬,৮১০,৯১৩২৪,০৫৯ বর্গকিলোমিটার (৯,২৮৯ মা)
হিউস্টন৬,৩১৩,১৫৮২৬,০৬১ বর্গকিলোমিটার (১০,০৬২ মা)
টরোন্টো৬,০৫৪,১৯১৫,৯০৬ বর্গকিলোমিটার (২,২৮০ মা)
ফিলাডেলফিয়া৬,০৩৪,৬৭৮১৩,২৫৬ বর্গকিলোমিটার (৫,১১৮ মা)
ওয়াশিংটন, ডি.সি.৫,৯৪৯,৮৫৯১৪,৪১২ বর্গকিলোমিটার (৫,৫৬৫ মা)
মায়ামি৫,৮২৮,১৯১১৫,৮৯৬ বর্গকিলোমিটার (৬,১৩৭ মা)

২০১১ আদমশুমারি তথ্য থেকে

অর্থনীতিসম্পাদনা

ক্রমিকদেশজিডিপি (পিপিপি, ২০১৪)
মিলিয়ন মার্কিন ডলার
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র১৭,৪১৯,০০০
 মেক্সিকো২,১৪৮,৮৮৪
 কানাডা১,৫৯৫,৯৭৫
 কিউবা২৩৪,১৯৩
 ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র১৩৮,৫১১
 পুয়ের্তো রিকো১২৫,৬৩০
 গুয়াতেমালা১১৯,৮১১
 পানামা৮০,৮১১
 কোস্টা রিকা৭১,২৩৪
১০  এল সালভাদোর৫১,১৯৩
ক্রমিকদেশজিডিপি (ন্যূনতম, ২০১৪)
মিলিয়ন মার্কিন ডলার
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র১৭,৪১৯,০০০
 কানাডা১,৭৮৬,৬৫৫
 মেক্সিকো১,২৯১,০৬২
 পুয়ের্তো রিকো১০৩,১৩৫
 কিউবা৭৭,১৫০
 ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র৬৪,০৫৮
 গুয়াতেমালা৫৮,৭২৮
 কোস্টা রিকা৪৯,৫৫৩
 পানামা৪৬,২১৩
১০  ত্রিনিদাদ ও টোবাগো২৮,৮৭৪

কানাডা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বহুমূখী এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এই তিনটি দেশ, এমনকি সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড়[৭০]। ২০১৪ সালের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু বার্ষিক আয় (জিডিপি, পিপিপি) ৫৪,৯৮০ ডলার এবং বাকি তিনদেশের তুলনায় অর্থনীতিতে প্রযুক্তিগতভাবেও উন্নত[৭০]। ২০১০ সালের প্রাক্কলন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির ৭৬.৭% অবদান সেবাখাতের, ২২.২% অবদান বিভিন্ন শিল্পকারখানার এবং ১.২% অবদান কৃষিখাতের[৭০]

কানাডা সেবাখাত, খনি এবং উৎপাদন খাতে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে[৭১]। ২০১৪ সালে ২০১৪ সালের তথ্যমতে, কানাডার মাথাপিছু আয় ছিল ৪৪,৬৫৬ ডলার এবং দেশটির ন্যুনতম জিডিপি ছিল সারা বিশ্বের মধ্যে ১১তম[৭১]। ২০১০ সালের প্রাক্কলন অনুসারে, কানাডার জিডিপির শতকরা ৭৮ভাগ আসে সেবাখাত থেকে, ২০ ভাগ আসে কলকারখানার উদ্ভূত পণ্য থেকে এবং শতকরা ২ ভাগ আসে কৃষিখাত থেকে[৭১]। অন্যদিকে ২০১৪ সালের তথ্যমতে, মেক্সিকোর মাথাপিছু আয় ছিল ১৬,১১১ ডলার এবং দেশটির ন্যুনতম জিডিপি ছিল সারা পৃথিবীর মধ্যে ১৫ তম[৭২]। নতুন একটি শিল্পায়িত দেশ হিসেবে[৩১], মেক্সিকো তার অগ্রগতি ধরে রেখেছে আধুনিক এবং পুরাতন কারখানা, কৃষিপ্রযুক্তি এবং সেবাখাতের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে[৭৩]। দেশটির আয়ের প্রধান উৎসগুলো হলো খনিজ তেল, কারখানাজাত দ্রব্যাদির রপ্তানী, মোটরগাড়ী নির্মাণ, ভারি কারখানা, খাদ্যদ্রব্য, ব্যাংকিং এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক সেবাখাত[৭৪]

উত্তর আমেরিকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মূলত তিনটি প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল[৭৫]। এই তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গুলো হলো: নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এনএএফটিএ), ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি এন্ড কমন মার্কেট(ক্যরিকম) এবং সেন্ট্রাল আমেরিকান কমন মার্কেট(সিএসিএম)[৭৫]। এই তিনটি অঞ্চলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দুইটি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলগুলো ছাড়াও আরো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, নাম কানাডা-কোস্টারিকা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট। এটি বাদে বাকি অঞ্চলগুলো নিয়ে গঠিত, অবশ্য এই জোন গুলোতে ট্রেড ভূক্ত অন্যান্য দেশসমূহও রয়েছে, যেমন- মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশসমূহ।

নর্থ আমেরিকান ফ্রী ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এনএএফটিএ) হলো পৃথিবীর প্রধান চারটি বাণিজ্যিক অঞ্চলের একটি[৭৬]। ১৯৯৪ সালে এই অঞ্চলটি গঠিত হয়, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডার মধ্যে বাণিজ্যিক সমতা এবং দেশগুলোর মাঝে আন্তঃবাণিজ্যিক সম্পর্ক সহজতর করার লক্ষে[৭৭]। কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইতোমধ্যে একটি দ্বিজাতী বাণিজ্যিক চুক্তি (পৃথিবীর সর্ববৃহৎ) বিদ্যমান রয়েছে, যার নাম কানাডা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিলেশান, এই চুক্তির আওতায় দেশ দুটি নিজেদের মধ্যে বিনাশুল্কে আমদানি রপ্তানী করে থাকে[৭৮], এনএফটিএ মেক্সিকোকেও বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার সুবিধা প্রদান করেছে। এই মুক্ত বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যে বাণিজ্যকে বিনা শুল্কের পর্যায়ে উন্নিত করেছে। দেশগুলোর মধ্যে এই মুক্ত বাণিজ্যের পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ২০১০ সালের তথ্য মতে, এনএফটিএ এর তিনটি দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়ে সর্বাধিক ২৪.৩% প্রবৃদ্ধি বা ৭৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌছায়[৭৯]। এনএফটিএ ভূক্ত অঞ্চলসমূহের জিডিপি (পিপিপি)- পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রায় ১৭.৬১৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার[৮০]। একই সাথে বলা যায়, ২০১০ এর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি হলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনীতি, পাশাপাশি দেশটির ন্যুনতম জিডিপির পরিমাণ ১৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলার[৮১]। এনএএফটিএ দেশ গুলো হলো নিজেদের মধ্যে সর্বাধিক বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশিদার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো মেক্সিকো এবং কানাডার সবচেয়ে বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার[৮২], যখন কিনা কানাডা এবং মেক্সিকো হলো নিজেদের তৃতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার[৮৩][৮৪]

ক্যারিবিয়ান বাণিজ্যিক অঞ্চল বা ক্যারিকম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৭৩ সালে, ১৫ টি ক্যারিবিয়ান দেশ সমূহের মধ্যে। ২০০০ সালের তথ্য মতে, ক্যারিকমের বাণিজ্যের পরিমাণ দাড়িয়েছে $৯৬ বিলিয়ন। ক্যারিকম দেশগুলো নিজেদের মধ্যে একটি সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করে। বিগত দশক গুলোতে এই বাণিজ্যিক এলাকাটি মূলত মুক্ত বাণিজ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং ক্যারিকম অফিস অব নেগোশিয়েশান (ওটিএন) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দেশগুলোর জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।

মধ্য আমেরিকার অর্থনীতিকে একত্রিত করার কাজ শুরু হয় মূলত, ১৯৬১ সালের সেন্ট্রাল আমেরিকান কমন মার্কেট চুক্তির আওতায়; এই চুক্তিটি ছিল প্রথম অর্থনৈতিক চুক্তি, যা কিনা দেশগুলোর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করার জন্য করা হয়। বর্তমানে এই সেন্ট্রাল আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (সিএএফটিএ) চুক্তির ভবিষ্যত খুব একটা পরিষ্কার নয়[৮৫]। সিএএফটিএ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল পাঁচটি মধ্য আমেরিকান দেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ডোমিনিকা রিপাবলিকের মধ্যে। চুক্তিটির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল এনএএফটিএ এর মতো একটি মুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলা। যুক্তরাষ্ট্রের মতো কানাডাও এই বাণিজ্যিক অঞ্চলের অংশ। বর্তমানে প্রস্তাবিত কানাডা-সেন্ট্রাল আমেরিকা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (সিএ৪) এর কাজ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মতোই হবে।

এই দেশগুলো আন্ত:মহাদেশীয় বাণিজ্যিক এলাকার অংশ। মেক্সিকো যেমন কলম্বিয়া এবং ভেনিজুয়েলার সাথে জি৩ ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টে যুক্ত সাথে সাথে ইইউ এর সাথেও চুক্তিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র কতৃর্ক প্রস্তাবিত এবং রক্ষনাবেক্ষনকৃত বাণিজ্যিক চুক্তিগুলো মূলত ট্রান্স-আটলান্টিক ফ্রি ট্রেড এরিয়া এবং ইইউ এর সাথে সম্পর্কিত, অন্যদিকে ইউএস-মধ্যপ্রাচ্য ফ্রি ট্রেড এরিয়া মূলত বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা দেয়, এবং ট্রান্স-প্যাসিফিক স্ট্যাটেজিক ইকোনমিক পার্টনারশিপ মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান।

পরিবহন ব্যবস্থাসম্পাদনা

The full Pan American Highway (including South America), from Prudhoe Bay, Alaska to Ushuaia, Argentina.

পুরো আমেরিকা জুড়ে বিদ্যমান প্যান আমেরিকান হাইওয়ে ছিল প্রায় ৪৮,০০০ কি.মি. (৩০,০০০ মাইল) লম্বা। রাস্তাটিকে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো সরকার কখনোই স্বীকৃতি প্রদান করেনি, কেননা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সীমান্ত বরাবর একাধিক সংযোগ সড়ক রয়েছে। তথাপি রাস্তাটি মেক্সিকো থেকে উত্তর আমেরিকার উত্তরের প্রান্তবিন্দু পর্যন্ত প্রায় ২৬,০০০ কি.মি. (১৬,০০০ মাইল) লম্বা।

2006 map of the North American Class I railroad network

১৮৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম 'আন্তঃমহাদেশীয় রেললাইন' নির্মাণ করে। রেললাইনটি পূর্ব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরের তীর পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হয়, ১৮৬৯ সালের ১০ মে। সেদিন বিখ্যাত গোল্ডেন স্পাইক অণুষ্ঠানের মাধ্যমে ইউটার প্রমেন্টরি সামিটে উদ্বোধন করা হয়। এই আন্তঃমহাদেশীয় রেললাইনটি পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের জনসাধারণ এবং অর্থনীতির জন্য বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত করে এবং পূর্ববর্তি দশকের ওয়াগণ রেলকে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নিত করে।[৮৬] যদিও রেললাইনটি আমেরিকা মহাদেশে দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে পৃথিবীর সর্বাধিক লম্বা রেলপথ ছিলনা। ১৮৬৭ সালে নির্মিত তৎকালীন কানাডিয়ান গ্রান্ডট্রাঙ্ক রেলওয়ে (জিটিআর) ২,০৫৫ কিমি (১,২৭৭ মা) লম্বা, অন্টারিও থেকে কানাডিয়ান আটলান্টিক প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত সেই রেললাইনটি ছিল পৃথিবীর সর্বাধিক লম্বা রেল লাইন। জিটিআর রেলপথটি অবশ্য পোর্টহুরন (মিশিগান) এবং সেরিনা (অন্টারিও) দিয়েও অতিক্রম করে।

যোগাযোগ ব্যবস্থাসম্পাদনা

উত্তর আমেরিকার ২৪টি দেশ, অঞ্চল এবং অধীনস্থ অঞ্চল, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর অধীনস্থ অঞ্চল, কানাডা, বারমুডা এবং ১৭টি ক্যারিবিয়ান দেশসমূহের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার লক্ষে একটি সমন্বিত টেলিফোন নাম্বারিং প্লান হাতে নেওয়া হয়েছে যার নাম নর্থ আমেরিকান নাম্বারিং প্লান (এনএএনপি)।

সংস্কৃতিসম্পাদনা

কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র একসময় ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলশ্রুতিতে ইংরেজি ভাষাভাষী কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতিতে পারস্পারিক সাদৃশ্য লক্ষণীয়। যদিও গ্রীনল্যান্ডের সংস্কৃতিতে কানাডার ইন্ডিজেনিয়াস জনগনের সামান্য প্রভাব রয়েছে, তবে ডেনমার্ক ঔপনিবেশিকদের শতবর্ষী শাসনের ফলে প্রবল ডেনিশ প্রভাব বিদ্যমান। স্থানীয় ভাষাভাষী উত্তর আমেরিকানদের মধ্যে স্প্যানিস ঔপনিবেশিক প্রভাব লক্ষনীয়। মধ্য আমেরিকার দেশসমূহ এবং মেক্সিকোর জনগোষ্ঠির মধ্যে মায়া সভ্যতা এবং ইন্ডিজেনিয়াস জনগনের প্রভাব বিদ্যমান। মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশ সমূহের স্প্যানিস ভাষাভাষীদের ভূতাত্ত্বিক সাদৃশ্যের কারণে বেশ মিল খুজে পাওয়া যায়।

উত্তর মেক্সিকো বিশেষ করে মন্ট্রে, টিজুয়ানা, চিউড্যাড ওয়ারেজ এবং মেক্সিক্যালি শহরগুলোর সংস্কৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় জীবনধারা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় সমাজব্যবস্থা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। উপরিউক্ত শহরগুলোর মধ্যে মন্ট্রেকে সবচেয়ে বেশি আমেরিকান শহর বলে ধরা হয়।[৮৭] যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বেশিরভাগ অভিবাসীগণ দেশসমূহের দক্ষিণ সীমান্তবর্তী দেশ থেকে আসা। অ্যাগ্রোফোন ক্যারিবিয়ান দেশসমূহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন এবং তাদের ওপর ব্রিটিশ শাসনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রভাবের প্রত্যক্ষদর্শী। ইংরেজি ভাষাভাষী বেশিরভাগ ক্যারিবিয়ান জনগনই নিজ দেশের বাইরে (প্রবাসে) অবস্থান করে এবং বাকিরা যারা রয়েছে তারা দেশে অবস্থান বসবাস করে।

খেলাধুলাসম্পাদনা

নিচের টেবিলে যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর (সর্বাধিক আয়ের ভিত্তিতে) উল্লেখযোগ্য কিছু স্পোর্টস লীগের তালিকা:[৮৮][৮৯]

লীগখেলাদেশের
নাম
স্থাপিতদলসর্বশেষ
চুক্তি
আয়
US$(বিলিয়ন)
গড়
দর্শক
ন্যাশনাল ফুটবল লীগআমেরিকান ফুটবল যুক্তরাষ্ট্র১৯২০৩২১৯৫২$৯.০৬৭,৬০৪
মেজর লীগ বেসবলবেসবল যুক্তরাষ্ট্র১৮৬৯৩০১৮৯৯$৮.০৩০,৪৫৮
ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসসিয়েশানবাস্কেটবল যুক্তরাষ্ট্র১৯৪৬৩০১৯৫৪$৫.০১৭,৩৪৭
ন্যাশনাল হকি লীগআইস হকি যুক্তরাষ্ট্র
কানাডা
১৯১৭৩০১৯৭৮$৩.৩১৭,৭২০
লীগা এমএক্সফুটবল (সকার) মেক্সিকো১৯৪৩১৮——$০.৬[৯০]২৫,৫৫৭
মেজর লিগ সকারফুটবল (সকার) যুক্তরাষ্ট্র১৯৯৪২০[o ১]২০১৪[o ২]$০.৫২১,৫৭৪
  1. MLS plans to expand to 21 teams in 2017, and to 24 teams by 2020.
  2. While MLS folded one of its franchises after the 2014 season, two new teams were added for 2015, increasing the league's size by one.

আরও দেখুনসম্পাদনা

নোটসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

বহিঃসংযোগসম্পাদনা

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগবদরের যুদ্ধআনন্দবাজার পত্রিকাবাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলইসলামবাংলাদেশব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলদোয়া কুনুতফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলা ভাষাআবহাওয়াআর্জেন্টিনাআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাশেখ মুজিবুর রহমানমিয়া খলিফাকোস্টা রিকা জাতীয় ফুটবল দলরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুম্বই ইন্ডিয়ান্সবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহযাকাতলিওনেল মেসিফিতরামুহাম্মাদইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনকুরআনের সূরাসমূহের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলক্লিওপেট্রাচেক প্রজাতন্ত্রইউটিউবকাজী নজরুল ইসলামদোলযাত্রাআসসালামু আলাইকুমবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাশিয়া ইসলামচেন্নাই সুপার কিংসকুরআনবিকাশআয়াতুল কুরসিমৌলিক পদার্থের তালিকাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধছয় দফা আন্দোলনশাকিব খানসানরাইজার্স হায়দ্রাবাদভুটানসৌদি আরবআল্লাহর ৯৯টি নাম২০২৪ কোপা আমেরিকাবিশ্ব থিয়েটার দিবসবাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের তালিকাপহেলা বৈশাখসেজদার আয়াতভারতপদ্মা সেতুদৈনিক প্রথম আলোঢাকা মেট্রোরেলভূমি পরিমাপশেখ হাসিনাবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহওয়ালাইকুমুস-সালামভৌগোলিক নির্দেশকবদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাদের তালিকাযৌনসঙ্গমবাংলাদেশী টাকাইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিকম্পিউটারহজ্জটুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকের রেকর্ড তালিকাবাংলা বাগধারার তালিকানেপোলিয়ন বোনাপার্টবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাবিভিন্ন দেশের মুদ্রাটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাবাংলা ভাষা আন্দোলন২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব২৭ মার্চজনি সিন্সবাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২সাহাবিদের তালিকাঅকাল বীর্যপাত২০২৩ট্রাভিস হেডন্যাটোমুহাম্মাদের স্ত্রীগণলিঙ্গ উত্থান ত্রুটিমাইকেল মধুসূদন দত্তজানাজার নামাজব্রাজিলমহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলবসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রডুগংমুস্তাফিজুর রহমানবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীপশ্চিমবঙ্গফরাসি বিপ্লব